দুর্গাপূজা

দুর্গাপূজা

দক্ষিণ এশিয়ার বার্ষিক হিন্দু উত্সব
দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হল হিন্দু দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত একটি উৎসব। দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজেই প্রচলিত। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব।আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
দুর্গাপূজা
Durga Puja DS.jpg
পূজা মণ্ডপে মা দুর্গা
এছাড়াও বলা হয়অকালবোধন, শারদোৎসব, বিজয়াদশমী,দশেরা
পালনকারীবাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়
ধরনবাঙালি হিন্দু উৎসব
(ভারতে প্রধানত পশ্চিমবঙ্গঅসম,ত্রিপুরাবিহারে সহ বিভিন্ন রাজ্যে উদযাপিত, এছাড়াও বাংলাদেশ সহ যেখানেই বাঙালি হিন্দু সেখানেই উদযাপিত হয়)
উদযাপনপ্রথানুসারে পনেরো, দশ বা পাঁচ দিন
পালনশাস্ত্রীয়দুর্গাষষ্ঠী: বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস;
মহাসপ্তমী: নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তম্যাদিকল্পারম্ভ, সপ্তমীবিহিত পূজা;
মহাষ্টমী: মহাষ্টম্যাদিকল্পারম্ভ, কেবল মহাষ্টমীকল্পারম্ভ, মহাষ্টমীবিহিত পূজা, বীরাষ্টমী ব্রত, মহাষ্টমী ব্রতোপবাস, কুমারী পূজা, অর্ধরাত্রবিহিত পূজা, মহাপূজা ও মহোৎসবযাত্রা;
সন্ধিপূজা ও বলিদান;
মহানবমী: কেবল মহানবমীকল্পারম্ভ, মহানবমী বিহিত পূজা;
বিজয়াদশমী: বিজয়াদশমী বিহিত বিসর্জনাঙ্গ পূজা, বিসর্জন, বিজয়াদশমী কৃত্য ও কুলাচারানুসারে বিসর্জনান্তে অপরাজিতা পূজা।
সামাজিক: পত্রপত্রিকার পূজাসংখ্যা প্রকাশ, মণ্ডপ পরিক্রমা, শারদ পুরস্কার বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শাস্ত্রীয় সংগীতানুষ্ঠান, শিল্পপ্রদর্শনী ও সমাজসেবামূলক কাজকর্ম।
শুরুসাধারণত মহাষষ্ঠী (ক্ষেত্রবিশেষে কুলাচার অনুসারে, ভাদ্রকৃষ্ণানবমী বা আশ্বিন শুক্লা প্রতিপদ)
সমাপ্তিবিজয়াদশমী
তারিখআশ্বিন শুক্লপক্ষ অথবা চৈত্র শুক্লপক্ষ
স্থিতিকালপাঁচ দিন
সংঘ্টনবার্ষিক
সম্পর্কিতমহালয়াদশহরাজগদ্ধাত্রী পূজা
দুর্গাপূজা
দুর্গাপূজা ভারতবাংলাদেশ ও নেপাল সহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয়ে থাকে। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হওয়ার দরুন বাংলাদেশ ও ভারতেরপশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যে দুর্গাপূজা বিশেষ জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। এমনকি ভারতেরঅসম,বিহারঝাড়খণ্ড,মণিপুর এবংওড়িশা রাজ্যেও দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবাসী বাঙালি ও স্থানীয় জনসাধারণ নিজ নিজ প্রথামাফিক শারদীয়া দুর্গাপূজা ও নবরাত্রিউৎসব পালন করে। এমনকি পাশ্চাত্য দেশগুলিতে কর্মসূত্রে বসবাসরত বাঙালিরাও দুর্গাপূজা পালন করে থাকেন। ২০০৬ সালে গ্রেট ব্রিটেনের রাজধানীলন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামের গ্রেট হলে "ভয়েসেস অফ বেঙ্গল" মরসুম নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর অঙ্গ হিসেবে স্থানীয় বাঙালি অভিবাসীরা ও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এক বিরাট দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন।[১]
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে "দুর্গাষষ্ঠী", "মহাসপ্তমী", "মহাষ্টমী", "মহানবমী" ও "বিজয়াদশমী" নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় "দেবীপক্ষ"। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া; এই দিন হিন্দুরা তর্পণ করে তাঁদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে। দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হল কোজাগরী পূর্ণিমা। এই দিন হিন্দু দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। কোথাও কোথাও পনেরো দিন ধরে দুর্গাপূজা পালিত হয়। সেক্ষেত্রে মহালয়ার আগের নবমী তিথিতে পূজা শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর শহরের মৃন্ময়ী মন্দির এবং অনেক পরিবারে এই রীতি প্রচলিত আছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতে মহাসপ্তমী থেকে বিজয়াদশমী পর্যন্ত (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মহাসপ্তমী থেকে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত) চার দিন সরকারি ছুটি থাকে। বাংলাদেশে বিজয়াদশমীতে সর্বসাধারণের জন্য এক দিন এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য ৩ দিন সরকারি ছুটি থাকে।
পারিবারিক স্তরে দুর্গাপূজা প্রধানত ধনী পরিবারগুলিতেই আয়োজিত হয়। কলকাতা শহরের পুরনো ধনী পরিবারগুলির দুর্গাপূজা "বনেদি বাড়ির পূজা" নামে পরিচিত। পারিবারিক দুর্গাপূজাগুলিতে শাস্ত্রাচার পালনের উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়। পূজা উপলক্ষে বাড়িতে আত্মীয়-সমাগম হয়ে থাকে। অন্যদিকে আঞ্চলিক স্তরে এক একটি অঞ্চলের বাসিন্দারা যৌথভাবে যে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন তা বারোয়ারি পূজা বা সর্বজনীন পূজা নামে পরিচিত। ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের সময় সর্বজনীন পূজা শুরু হয়। মুলত দেবী দুর্গাকে মাথায় রেখেই দেশমাতা বা ভারতমাতা বা মাতৃভূমির জাতীয়তাবাদী ধারনা বিপ্লবের আকার নেয়। দেবী দুর্গার ভাবনা থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দে মাতরম গানটি রচনা করেন যা ভারতের স্বাধীনতা-আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র। সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ বিল্পবী ও জাতীয়তাবাদী নেতারা বিভিন্ন সর্বজনীন পূজার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। এখন সর্বজনীন পূজায় "থিম" বা নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক মণ্ডপ, প্রতিমা ও আলোকসজ্জার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। থিমগুলির শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে "শারদ সম্মান" নামে বিশেষ পুরস্কারও দেওয়া হয়। এছাড়া বেলুড় মঠ সহ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বিভিন্ন শাখাকেন্দ্র এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘের বিভিন্ন কেন্দ্রে সন্ন্যাসীরা দুর্গাপূজার আয়োজন করেন।

Comments

Popular posts from this blog

দুটি সংখ্যার গুনগফল ও ভাগফল যথাক্রমে 128 ও 2 , সংখ্যা দুটি কি কি?

প্রশ্নঃ ছয়টি ক্রমিক সংখ্যার প্রথম তীনটির যোগফল 36, বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম সংখ্যা দুটির যোগফল কত?

যে ক্ষুদ্রতম পূর্ণবর্গ সংখ্যা 16, 24, 32 দ্বারা বিভাজ্য তা হল ---